শরীফ আহমদ:: সিলেট জেলার ওসমানীনগরে দিগন্ত জুড়ে শীতের সবজির সমারোহ। সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন উপজেলার অনেক কৃষক। তাই এখানকার কৃষকরা ধান চাষের পরিবর্তে সবজি চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে এ অঞ্চলের সবজি বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। সিলেট জেলার ৬০ ভাগ মানুষই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। এই জেলায় মানুষের প্রধান উত্পাদনকারী ফসল ছিল ধান। বিগত কয়েক বছর এই উত্পাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় ঐসব ফসল থেকে অনেক কৃষক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
সিলেট জেলার ওসমানীনগর উপজেলার কৃষক বিকল্প ফসল হিসেবে বেছে নিয়েছে সবজি চাষ। এরই মধ্যে উপজেলায় ধানের পরিবর্তে সবজি চাষের বিপ্লব ঘটিয়েছে অনেক কৃষক। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সরবরাহ করা হয় এখানে চাষ করা নানা নামের শাক-সবজি। দয়ামীর ইউনিয়নের চিন্তামনি গ্রামের মতো এখন জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কৃষকরা সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন।সীম, লাউ, লালশাক, পুঁইশাক, পালংশাক,মুলাশাক ও কলমিশাক আর করলা, বেগুন, বরবটির চাষ তুলনামূলক বেশিই হয়ে থাকে এ গ্রামে। এসব চাষ করেই দরিদ্রতা থেকে মুক্তি পেয়েছে অনেক পরিবার ; স্বাবলম্বী হয়েছে। তাই নিজের জমি না থাকলেও অন্যের জমি বর্গা নিয়ে হলেও শাক-সবজি চাষ করছে মানুষ।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, সারা গ্রাম জুড়ে শুধুই সবজির আবাদ। খামার-খেতে ব্যস্ত কিষান-কিষানীরা। এখানকার সবজি চাষিরা জানান, তারা বরাবরই শাক-সবজি চাষ করে আসছেন। এতে তারা সফলও। তাদের মতামত, সরকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো যদি তাদের চাষকৃত শাক-সবজির উত্পাদন বাড়াতে আর একটু সতর্ক নজর রাখে তাহলে আরো সফল ও লাভবান হওয়া সম্ভব।
প্রায় ৫ বছর আগে চিন্তামনি গ্রামের কৃষকরা সবজি চাষ শুরু করেন। যাদের কোনো কাজ আর জমি ছিল না কিন্তু অভাব ছিল মাথা সমান। তারাই সবজি আবাদে মন দেন ঐ সময়। পরবর্তীতে তাদের সফলতার সিঁড়িতে পা দিয়েছেন অনেক অভাবী যারা এখন সচ্ছল, সফল। তাদের চোখের আশার আলোতে উজ্জ্বল এখন চিন্তামনি গ্রাম।
সুফিয়ান খান নামে এক কৃষক জানান, ধানে লোকসান গুনতে গুনতে কৃষক যখন দিশাহারা তখন বিকল্প উপায়ে সবজি চাষে বেছে নিয়েছে। আমরা এখন সবজি চাষ করে অনেক বেশি লাভবান হচ্ছি। আমাদের উপজেলার সবজি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ও বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। এরই মধ্যে জেলায় শীতের আগমন ঘটেছে। সবজির চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে। ফুলকপি, বাঁধাকপি, মিষ্টি ও চালকুমড়া, ঢেঁড়স, শসা, করলা, ডাঁটা, মিষ্টি আলু, পটল, কাঁকরোল, চিচিঙ্গা, বরবটি, গাজর, মুলা, শালগম, কলা, বেগুনসহ নানান জাতের সবজি চাষে ব্যস্ততার মধ্যদিয়ে দিন পার করছে চাষিরা।
শুধু সুফিয়ান খান নয়, তার অনুপ্রেরণায় আজ অত্র এলাকায় অনেক কৃষক সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। সবাই ধানের পরিবর্তে সবজি আবাদ কে বেছে নিয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ওসমানীনগরে গত বছরে সবজি আবাদ হয় ১ হাজার ৪০০ হেক্টর। আর এ বছর সবজি আবাদ হয়েছে ১৫ শ ২০৫ হেক্টর। গত বছরের তুলনায় এবছর সবজির আবাদ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রখর রোদে কৃষকরা সবজি খেত পরিচর্যা করছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা কাজে ব্যস্ত সময় পার করেন। চাষিরা জানান, গত বছর তারা দাম ভালো পেয়েছেন। শ্রমিক ও কৃষি উপকরণের দাম বেশি হওয়ার কারণে খুব বেশি লাভ হচ্ছে না।
সুফিয়ান খানের মত আজ অনেকই সফল চাষি । সফল চাষি বাচ্চু মিয়া জানান, নিজ উদ্যোগে এবং স্থানীয় কৃষি অফিসের সহযোগিতায় স্বল্প পুঁজি খাটিয়ে তারা তাদের অভাব দূর করতে পেরেছেন। প্রতি মৌসুমে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পুঁজি খাটিয়ে ১ লাখ ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ করেছেন বলেও জানান তারা।
সিলেট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সালাহ উদ্দিন জানান, কৃষি বিভাগ থেকে আগাম সবজি চাষের জন্য কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। এ অঞ্চলের সবজি বিভিন্ন দেশেও রপ্তানি হচ্ছে। এছাড়া কৃষকরা যেন সহজেই কীটনাশক, বীজ, সার ও উত্পাদন সহায়ক যন্ত্রপাতি পান সে জন্য ব্লক সুপারভাইজাররা নিয়মিত তদারকি করে থাকেন।